1. admin@weeklyphultara.com : admin :
  2. info.popularhostbd@gmail.com : PopularHostBD :
শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন

শায়খে বালিয়ার অভাব অপূরনীয়

সাপ্তাহিক ফুলতারা (ফুলপুর, ময়মনসিংহ)।
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩
  • ১৭৬ বার পড়া হয়েছে / ইপেপার ইপেপার

উপমহাদেশের প্রখ্যাত অলিকুল শিরোমণি বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ লাখো আলেমের নীতিবান উস্তাদ, রাসূল (সা.) এর প্রদর্শিত পথে হেদায়েত প্রাপ্তদের মাঝে নববী আদর্শে একজন উজ্জীবিত আলেম ছিলেন শায়খে বালিয়া আল্লামা গিয়াস উদ্দিন পাঠান পীর সাহেব (রহ.)। হেদায়েত প্রত্যাশী মানব কোলের জন্যে তিনি ছিলেন রাসূলের আদর্শের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার আচার-আচরণ ও জীবন আদর্শ ছিলো রাসূলের প্রদর্শিত সুন্নাতে গড়া৷ পীর সাহেব (রহ.) এর জন্ম বৃহত্তর ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার (সাবেক ১১ নং) বর্তমান ৯ নং বালিয়া ইউনিয়নের পাঠান পাড়া নামক গ্রামে। তিনি ১১ই মার্চ ১৯৩৯ ইং সালে এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শিশু ও বাল্যকালে অন্য দশটা ছেলের চেয়ে ভিন্ন ও প্রতিভাবান ছিলেন৷ তার আমল ও আখলাখ ছিলো খুবই চমৎকার৷ পিতার নাম মরহুম তৈয়্যব উদ্দিন পাঠান। শায়খে বালিয়ার পীর সাহেবের দাদা মরহুম মৌলভী হাবিবুল্লাহ্ পাঠানের আদিবাস ছিলো ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে। পরে আঠারো শতকের ইংরেজদের উৎপীড়নে নিজেদের জান মাল ও আত্মরক্ষার্থে বালিয়া ইউনিয়নের পাঠান পাড়া নামক স্থানে এসে গোড়াপত্তন করেন। অল্প দিনের মাঝেই পাঠান বাড়ির সুনাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে হাবিবুল্লাহ্ পাঠানের সততা, তাকওয়া ও পরহেজগারীতায় এলাকাবাসী মুগ্ধ হয়ে গ্রামের একটি অংশকে পাঠান পাড়া নামে রুপান্তরিত করে। মরহুম তৈয়্যব উদ্দিন পাঠান একজন দ্বীনদার ব্যাক্তি হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত ছিলেন। তিনি কুরআন হাদিসের বাণী লোকদের মাঝে প্রচার- প্রসার করাটা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ঈমানী দায়িত্ব মনে করতেন। তাইতো
শৈশবে আল্লামা গিয়াস উদ্দিন পাঠান (রহ). কে কুরআন হাদিসের আলোকে জীবন গড়ে দেওয়ার দায়িত্বটা তিনি নিজেই নিয়েছিলেন। তারপর স্থানীয় মক্তবের শিক্ষকদের কাছে শিক্ষা লাভের পর ১৯৪৫ সালে ৬ বছর বয়সে তিনি ঘোঁমগাও মীর বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রাথমিক ধাপ শেষ করেন। পরে ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশের প্রাচীনতম দ্বিনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন৷ পিতার একান্ত ইচ্ছে ছিলো ছেলেকে একজন রাসূলের আদর্শে অনুসারী দ্বীনের প্রকৃত খাদেম হিসেবে আল্লাহ্ কবুল করবেন। আর সেই মনোবাঞ্ছা নিয়েই দুনিয়াবী শিক্ষা বাদ দিয়ে তাকে মাদ্রাসায় পড়তে অনুপ্রাণিত করেন।১৯৬০ সালে সিলেট আঞ্চলিক শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত দাওরায়ে হাদিস তথা তাকমীল জামাতে প্রথম স্থানে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষকদের নয়নমণি হিসেবে পরিণত হোন তিনি৷ ২১ বছর বয়সে তিনি সিলেট আযাদ দ্বীনি এদারা থেকে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে কৃতিত্বের সাথে পাশ করার পর উচ্চতর গবেষণার জন্য শায়খ নূরউদ্দিন গহরপুরী (রহ্.) এর তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় উস্তাদের নির্দেশে জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া গহরপুর মাদ্রাসার মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন এবং প্রথম বছরেই কিতাব বিভাগের শীর্ষ স্থানীয় কিতাব গুলোর পাঠদান করে ছাত্র- শিক্ষক ও অভিভাবকদের মনে জায়গা করে নেন। তারপর ১৯৬৮ সালে জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া মাদ্রাসার তৎকালীন মোহতামিম হযরত মাওলানা দৌলত আলী রহ. এর আমলে একঝাক নবীন প্রতিভাবান তরুণ আলেমের প্রযোজনের হলে মাদ্রাসা ও এলাকার সকলের হৃদয়ে ও মুখে যে নামটি এসেছিলো তিনি ছিলেন বালিয়ার পীর আল্লামা গিয়াস উদ্দিন পাঠান (রহ্.)। অতঃপর বালিয়া মাদ্রাসার তৎকালীন সিনিয়র উস্তাদগণ তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে বালিয়া মাদ্রাসায় প্রথম বছরে ১ মাস ২য় বছরে ৬ মাস ও ৩য় বছরে ৯মাস ক্লাস করার পর বাকি দিন গুলো গহরপুর মাদ্রাসায় ছবক দান করতেন৷ ১৯৬৮ সালের ২৭শে এপ্রিল তিনি গহরপুর মাদ্রাসা থেকে অব্যাহত নিয়ে বালিয়া মাদ্রাসায় নিয়মিত মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন৷ তারই ধারাবাহিকতায় বালিয়া মাদ্রাসার তৎকালীন মোহতামিম আল্লামা দৌলত আলী (রহ্.) এর মতে মাদ্রাসার দায়িত্বভার অন্য কাউকে দেয়া প্রয়োজন মনে করে সকল শিক্ষক- স্টাফ ও এলাকাবাসীর মতানুসারে ১৯৮০ সালের ২৬ শে আগষ্ট আল্লামা গিয়াস উদ্দিন পাঠান (রহ্) এর হাতে মাদ্রাসার দায়িত্বভার প্রদান করা হয়৷ মাদ্রাসার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে তিনি বালিয়া মাদ্রাসার শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে নানান অগ্রনী ভূমিকা পালন করে তার দূরদর্শী ও সদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় মাদ্রাসার সার্বিক উন্নয়ন তরান্বিত করেন। এই মহামনিষী বালিয়ার পীর আল্লামা গিয়াস উদ্দিন পাঠান (রহ.) ২ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩ সালে লক্ষ কোটি মুরিদান ভক্ত সারগেদ ও তাওহিদী জনতার উপস্থিতিতে খতমে বুখারি শরীফের দোয়া শেষ করার পর হাসপাতালে যাওয়ার পথে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে বালিয়াবাসী তথা ফুলপুরবাসীকে এয়াতিম করে না ফেরার দেশে চলে যান৷ উনার শূণ্যতা অপূরনীয়। আল্লাহপাক হুজুরকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম মাকাম দান করুণ…..আমিন। (সংক্ষিপ্ত)

শামীমা পাঠান
সাহেবজাদী, শায়খে বালিয়া,
ফুলপুর, ময়মনসিংহ।

সংবাদ টি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved
Design BY POPULAR HOST BD